পালংঘাট পুলিশ ফাঁড়ির অধিন ধর্মিখালের এক নাবালিকা হাইলাকান্দি থেকে ৯দিন পর উদ্ধার। গ্রেপ্তার এক যুবক।
বিগত ১৯জুলাই পালংঘাট পুলিশ ফাঁড়ির অন্তর্গত ধর্মিখাল এলাকার এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়। এনিয়ে পালংঘাট পুলিশে এজাহার দায়ের করেন নাবালিকার পিতা। এজাহার মতে জানা যায়, বিগত ১৯ জুলাই ধর্মিখালের এক নাবালিকা হটাৎ টিউশনে যাওয়ার কথা বলে বিকাল ৪ঘটিকায় ঘর থেকে বের হলে আর ঘরে ফিরেনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলেও মেয়েটি ঘরে না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন পিতা মাতা। সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেলে হটাৎ ঐ নাবালিকার বড় বোনের মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে শ্রাবন রায় নামের এক যুবক। এবং সে নাবালিকার বড় বোনকে বলে, আপনি আমাকে গালিগালাজ করার কারণে আপনার বোনকে নিয়ে পালিয়েছি। বিবাহের পর আপনাদেরকে উভয়ের ফটো পাঠিয়ে দিব। সেই বলে ফোনটা কেটে দেয় এরপর মোবাইল সুইচ অফ হয়ে যায়। আর যোগাযোগ করা যায়নি। এদিকে পালংঘাট পুলিশ কেইস নং ১২১/২০২৪/ সেকশন ৮৭ ডিএনএস এর অধিনে মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তে নেমে পড়লেও তদন্তে হিমশিম খেতে হয়েছে। একদিকে রাগের মাথায় নাবালিকার মা তার সিম কার্ড ভেঙে ফেলেন। অন্যদিকে যে মোবাইল থেকে ফোন আসে সেটি ও সুইচ অফ। পরিবারের সদস্যরা তো কোনো খবর নেওয়ার সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ফাঁড়ি ইনচার্জ ধনেশ্বর দাসকে। একমাত্র সুত্র সেই মোবাইল ফোন নম্বর ই ছিল, সেই মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ও পাওয়া যাচ্ছিল না। গড়িয়ে যায় প্রায় সপ্তাহ দিন। হটাৎ সেই নম্বরে টাওয়ার সিগ্নাল সিডিআরে বের হয়। কাছাড়ের পুলিশ সুপার নুমাল মাহাত্তা ও ঘটনাটি নিয়ে তৎপর হন। পরে হাইলাকান্দি সদর থানাধীন কলেজ রোড পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় দুদিন বিভিন্ন এলাকায় গোপনে তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে ক্লু বের করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আজ অর্থাৎ রবিবার সফল অভিযানে নাবালিকা এবং এক যুবককে কলেজ রোড এলাকার সৎসঙ আশ্রমের নিকটে থাকা তার নিকটাত্মীয়ের ঘর থেকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পুলিশের এক সুত্র মতে জানা যায়, বিগত দুমাস পূর্বে হাইলাকান্দি জেলার পাইকানের সত্যেন্দ্র রায়ের বছর ২৭ এর পুত্র সহদেব রায় নামের যুবকের সাথে নাবালিকাটির ইন্সটাগ্রামে পরিচয় হয়। সহদেব ব্যাঙালোরে থাকতো এবং গত ১৯ তারিখে সে ব্যাঙালোর থেকে হাইলাকান্দিতে আসে। সেদিন বিকালে ঐ নাবালিকাটি বাড়ি থেকে বের হয়ে শিলচর কাছাড় কলেজ পয়েন্টে গিয়ে নাবালিকাটি ঐ যুবককে ফোন করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এবং তাকে নিয়ে না গেলে আত্মহত্যা করার হুমকি দিলে সে হাইলাকান্দি থেকে এসে নিয়ে যায়। এরপর সত্যিই যুবকটি তার বড় বোনকে ফোন করে। এর পরদিন আবার নাবালিকাটি তার মাকে ফোনকে খোজাখুজি না করার পরামর্শ দেয়। গোটা বিষয়টি সামনে আসতেই মাত্র সাড়ে ১৩ বছরের নাবালিকার সাহসিকতা নিয়ে চিন্তিত অভিজ্ঞ মহল। আজ উভয়কে সন্ধ্যায় পালংঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। আগামীকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
বর্তমানে কচিকাঁচাদের হাতে মোবাইল দেওয়া ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সংবাদ শিরোনামে নাবালিকা অপহরণ, নিখোঁজ ইত্যাদি অহরহ দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মোবাইল তুলে দিতে একদিকে বাধ্য করে দিচ্ছে। অন্যদিকে ফ্যাশন। ছেলে মেয়েদের হাতে মোবাইল না থাকলে বড় লোক হওয়া কি মানায় এই সমাজে। এই সামান্য সামান্য কারণগুলি বর্তমানে কম বয়সীদের উত্ত্যক্ত করে তুলছে। বাড়ছে দিন দিন নিখোঁজ, অপহরণ মামলা। এগুলো আসলে নিখোঁজ বা অপহরণ নয় এগুলোর মুলে প্রেম কাহিনি। সমাজে মুখ দেখাতে গিয়ে এগুলো শব্দের আশ্রয় নিতে হয় অভিবাবকদেকে। এগুলো হ্রাস করতে অভিবাবকদের সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।